সৌদি আরবের ভিসা প্রসেস ২০২৫: বিস্তারিত গাইড ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

সৌদি আরবের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৫ – ধাপে ধাপে গাইডসহ কভার ছবি


সৌদি আরব! ছোটবেলা থেকেই এই নামটা শুনলেই কেমন যেন এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করতো। তখন কেউ বিদেশ যাওয়ার কথা বললেই মনে হতো, সে বুঝি সৌদিতেই যাচ্ছে। কারণ তখন এই দেশটাই ছিল সবচেয়ে সুপরিচিত।

এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও সৌদির প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি, বরং আরও বেড়েছে।কেউ যাচ্ছেন চাকরির জন্য, কেউ হজ–ওমরাহ, আবার কেউ পড়াশোনার উদ্দেশ্যে।

তবে যে কারণেই যান না কেন, মাথায় ঘোরে একটাই প্রশ্ন—

 "সৌদি আরবের ভিসা কিভাবে নিতে হয়?"

অনেকেই দোটানায় পড়ে যান আগে আবেদন করবো, নাকি প্রক্রিয়া আগে বুঝে নিব নাকি কোনটা কি করবো?

এই পোস্টে আমরা ধাপে ধাপে সব বিষয় স্পষ্ট করবো, যেন আপনি সহজেই বুঝে নিতে পারেন।

এই লেখায় আপনি জানবেন:

  • ভিসার ধরন
  • আবেদন করার নিয়ম
  • দরকারি কাগজপত্র
  • ২০২৫ সালের আপডেট তথ্য

চলুন তাহলে শুরু করা যাক — একদম গোড়া থেকে।

সৌদি আরবের ভিসার ধরন কী কী?

সৌদি আরবে যাওয়ার কারণ যেমন ভিন্ন হতে পারে, তেমনি ভিসার ধরনও একেকজনের জন্য আলাদা হয়।সঠিক ভিসা না বেছে নিলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। তাই চলুন আগে দেখে নেই সৌদির জনপ্রিয় ভিসা গুলো কী কী—

টুরিস্ট ভিসা:

আপনার উদ্দেশ্যে যদি ভ্রমন করা হয় তাহলে এই ধরনের ভিসা আপনার জন্য।

সাধারণত ৩০ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি হয়ে থাকে।

ওয়ার্ক ভিসা (চাকরি):

যারা চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চান তাদের জন্য এই ধরনের ভিসা লাগে।

এটি মূলত স্পন্সর ভিত্তিক (কাফেলা সিস্টেম)।

হজ ও ওমরাহ ভিসা:

ধর্মীয় উদ্দেশ্যে যারা হজ বা ওমরাহ করতে চান, তাদের জন্যই এই ধরনের ভিসা।

এই ধরনের ভিসার সময়সীমা সীমিত এবং নির্দিষ্ট মৌসুমে দেওয়া হয়।

স্টুডেন্ট ভিসা:

সৌদিতে পড়াশোনার সুযোগ পেতে চাইলে এই ভিসা প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার লাগে।

বিজনেস ভিসা:

ব্যবসায়িক কাজে যারা সৌদি যেতে চান (মিটিং, ইনভেস্টমেন্ট ইত্যাদি), তাদের জন্য।

প্রতিটি ভিসার ধরন অনুযায়ী আবেদন প্রক্রিয়া, কাগজপত্র ও নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন। তাই শুরুতেই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ভিসা টাইপটা নির্ধারণ করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

সৌদি আরবের ভিসার আবেদন শর্ত ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

ভিসার আবেদন করতে গেলে কিছু শর্ত মানতে হয়, আর কিছু কাগজপত্রও জমা দিতে হয়।

এই দুইটা বিষয় নিচে আলাদা করে সহজভাবে বোঝানো হলো — যেন আপনি ঝামেলা ছাড়াই বুঝতে পারেন।

আবেদনের শর্তাবলি

সাধারণত সৌদি ভিসার জন্য নিচের শর্তগুলো মানতে হয়:

  • বৈধ পাসপোর্ট: আবেদনের সময় পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
  • সাম্প্রতিক ছবি: পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, সাধারণত সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে।
  • আবেদন ফি জমা: ভিসার ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হয়।
  • সঠিকভাবে ফর্ম পূরণ: আবেদন ফর্মে ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • স্পন্সর লেটার: চাকরি, ব্যবসা বা ইনভাইটেশনভিত্তিক ভিসার জন্য প্রয়োজন হতে পারে।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নির্দিষ্ট কিছু ভিসার ক্ষেত্রে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

ভিসা আবেদনের সময় নিচের ডকুমেন্টগুলো সাধারণত জমা দিতে হয়:

  • পাসপোর্ট (মূল ও ফটোকপি)
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি (২ কপি)
  • আবেদন ফরম
  • স্পন্সর লেটার (যদি থাকে)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাম্প্রতিক ৩–৬ মাস)
  • হেলথ সার্টিফিকেট
  • অন্যান্য ডকুমেন্ট:

যেমন– ইনভাইটেশন লেটার, ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স, ভ্যাকসিনেশন প্রুফ ইত্যাদি, ভিসার ধরন অনুযায়ী।

সৌদি আরব ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে - ২০২৫ ইনফোগ্রাফিক

সৌদি আরবের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

ভিসার আবেদন করতে চইলে কিছু ধাপ অনুসরন করে এগোতে হয়। নিচে সহজভাবে পুরো প্রক্রিয়াটা তুলে ধরা হলো—যেন নতুনদেরও বুঝতে অসুবিধা না হয়।

ধাপ ১: সঠিক ভিসার ধরন নির্ধারণ করুন

আপনি সৌদি আরবে কেন যাচ্ছেন সেটা ঠিকভাবে বুঝে ভিসার ধরন বেছে নিন।

ভুল ভিসা নির্বাচন করলে পুরো প্রক্রিয়াটাই বিফলে যেতে পারে।

ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন

পাসপোর্ট, ছবি, আবেদন ফরম, স্পন্সর লেটার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট — এসব আগেই গুছিয়ে রাখুন।

ধাপ ৩: অনলাইনে আবেদন করুন বা ভিসা সেন্টারে যান

সরকারি ভিসা পোর্টাল (Visa.mofa.gov.sa) অথবা অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন।

ধাপ ৪: আবেদন ফি জমা দিন

ভিসার ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি অনলাইনে বা সেন্টারে জমা দিন।

ফি জমার রশিদ সংরক্ষণ করে রাখুন।

ধাপ ৫: সাক্ষাৎকার বা মেডিকেল পরীক্ষা দিন (যদি প্রযোজ্য)

কিছু ভিসার জন্য সাক্ষাৎকার বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হতে পারে।

নির্দিষ্ট সময় মেনে হাজির হন।

ধাপ ৬: আবেদন স্ট্যাটাস চেক করুন

আবেদনের পর ওয়েবসাইটে গিয়ে নিয়মিত স্ট্যাটাস যাচাই করুন — “Under Process” বা “Approved” ইত্যাদি দেখা যাবে।

ধাপ ৭: ভিসা অনুমোদন হলে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন 

ভিসা অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট সেন্টার থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন এবং যাচাই করে নিন।

সৌদি আরবের ভিসার মেয়াদ ও প্রবেশ নিয়ম

ভিসা হাতে পেয়েও অনেকেই বুঝতে পারেন না ঠিক কতদিন সৌদি আরবে থাকা যাবে, বা কবে নাগাদ দেশ ছাড়তে হবে। তাই নিচে সহজভাবে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো:

  • ভিসার সাধারণ মেয়াদ: টুরিস্ট বা সাধারণ ভিসার মেয়াদ ৩০–৯০ দিনের মধ্যে হয়।
  • ওয়ার্ক/স্টুডেন্ট ভিসা: এসব ভিসার মেয়াদ তুলনামূলক দীর্ঘ হয়। কখনো ১ বছর বা তার বেশি।
  • সিঙ্গেল এন্ট্রি vs মাল্টিপল এন্ট্রি: সিঙ্গেল এন্ট্রি: একবার ঢুকে একবারই বের হওয়া যাবে।
  • মাল্টিপল এন্ট্রি: নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে একাধিকবার যাওয়া–আসা করা যাবে।
  • মেয়াদ গণনার শুরু: ভিসার সময় গণনা শুরু হয় সৌদি আরবে ঢোকার দিন থেকে (যেমন: আপনি ১ আগস্ট ঢুকলে সেদিন থেকেই সময় শুরু)।
  • মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশ ত্যাগ: সময়মতো দেশ না ছাড়লে জরিমানা, নিষেধাজ্ঞা বা ভবিষ্যতের ভিসা বাতিলের মতো সমস্যা হতে পারে।
কোন ভিসায় কতদিন থাকা যায় আর কয়বার যাওয়া–আসা করা যায়? দেখে নিন এক নজরে-
 
ভিসার ধরনসাধারণ মেয়াদএন্ট্রি টাইপ
টু্রিস্ট ভিসা৩০–৯০ দিনসিঙ্গেল / মাল্টিপল
ওয়ার্ক ভিসা১ বছর পর্যন্তসাধারণত মাল্টিপল
হজ / ওমরাহ ভিসানির্ধারিত মৌসুমসাধারণত সিঙ্গেল
স্টুডেন্ট ভিসাকোর্স অনুযায়ীসাধারণত মাল্টিপল
বিজনেস ভিসাস্বল্প মেয়াদিমাল্টিপল

আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ভিসা টাইপ বেছে নিন — ভুল নির্বাচন ভিসা বাতিলের কারণ হতে পারে।

সাধারণ ভুল ও সতর্কতা

  • অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোথাও আবেদন করবেন না
  • সব ডকুমেন্ট ভালোভাবে যাচাই করুন
  • ফি জমা দেওয়ার রশিদ হারাবেন না
  • স্পন্সর বা নিয়োগকর্তার তথ্য নিশ্চিত করুন
  • ভিসার মেয়াদ ও শর্তাবলি ভালোভাবে বুঝে নিন

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

প্রশ্ন ১: ভিসা পেতে কতদিন লাগে?

উত্তর: সাধারণত ৭-১৫ দিন। 

প্রশ্ন ২: আবেদন স্ট্যাটাস কীভাবে দেখব?

উত্তর: ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে আবেদন নম্বর দিয়ে চেক করুন।

প্রশ্ন ৩: কোন ভিসায় মাল্টিপল এন্ট্রি হয়?

উত্তর: ওয়ার্ক ও বিজনেস ভিসায়।

প্রশ্ন ৪: ফি কিভাবে দিতে হয়?

উত্তর: অনলাইনে বা অনুমোদিত সেন্টারে দিতে হয়।

প্রশ্ন ৫: ভিসা বাতিল হলে কী করবেন?

উত্তর: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অভিযোগ করুন বা এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


পরিশেষ:

সৌদি আরবের ভিসা পাওয়াটা অনেক সময় ধৈর্য্য ও সঠিক তথ্যের ওপর নির্ভর করে। আশা করি এই গাইডটা আপনার  জন্য সাহায্য করবে। নিয়ম-কানুন মাঝে মাঝে বদলাতে পারে, তাই অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপডেট নিতে ভুলবেন না।



আরও দখুন:

ভিসা কি? কিভাবে আবেদন করবেন ২০২৫ সালে

স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করবেন কীভাবে? ২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য







Comments