স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করবেন কীভাবে? ২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

২০২৫ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করার গাইড সম্পর্কিত কভার ইমেজ।


স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ হলো সঠিকভাবে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করা। ২০২৫ সালে কিছু নিয়ম নতুন হলেও, সাধারণ প্রক্রিয়া সব প্রায় আগের মতোই।

এইখানে আমি সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি কিভাবে আপনি ইউকে, মাল্টা, ইতালি, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ার মতো জনপ্রিয় দেশগুলোতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন, এবং এর জন্য কী কী প্রস্তুতি দরকার হবে।

আজকে যে মূল বিষয়গুলো আপনি জানতে পারবেন:

  • স্টুডেন্ট ভিসা কী
  • কারা আবেদন করতে পারবেন (যোগ্যতা)
  • কিভাবে আবেদন করবেন (ধাপে ধাপে)
  • জনপ্রিয় দেশের ভিসা প্রক্রিয়া
  • সাধারণ ভুল ও এড়িয়ে চলার টিপস
  • সাধারণ বনাম স্টুডেন্ট ভিসার পার্থক্য
  • ২০২৫ সালের প্রয়োজনীয় আপডেট

স্টুডেন্ট ভিসা কী?

ধরুন আপনি ইউরোপের কোন একটা দেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে চান—কিন্তু চাইলেই  তো আর আপনি সেই দেশে হুট করে চলে যেতে পারবেননা, তাই না? এজন্যই দরকার হয় স্টুডেন্ট ভিসা। এটা এমন এক ধরনের অনুমতি, যেটা আপনাকে সেই দেশের আইনের চোখে বৈধ করে তোলে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সেখানে থাকার এবং পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়।

যে দেশে আপনি পড়তে যাচ্ছেন, সেই দেশের সরকার এই ভিসা দিয়ে নিশ্চিত হয় যে আপনি সত্যিই পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই সেই দেশে থাকবেন। যদিও প্রতিটি দেশের নিয়ম-কানুন কিছুটা আলাদা, তবুও মূল উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই—আপনাকে শিক্ষার্থী হিসেবে সুযোগ দেওয়া হবে।

স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা অবশ্যই আপনার থাকতে হবে। নিচে সহজভাবে পয়েন্ট আকারে দিয়ে দিচ্ছি:

  • আপনি যে দেশে যেতে চান, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়েী ভর্তি অফার লেটার পেতে হবে
  • টিউশন ফি ও থাকার খরচ দেখানোর মতো যথেষ্ট ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে
  • ইংরেজি দক্ষতা প্রমাণের জন্য সাধারণত IELTS, TOEFL বা অনুরূপ টেস্টের স্কোর লাগবে
  • মেডিকেল চেকআপ ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স অনেক দেশের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক
  • পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে

এই শর্তগুলো আপনার দেশের পাশাপাশি যেই দেশে যেতে চান, সেই দেশের নিয়ম অনুযায়ী একটু-আধটু পরিবর্তন হতে পারে। তাই আগে থেকেই রিসার্চ করে জেনে নিন।

আবেদন করার ধাপগুলো কী?

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু ধাপ নিয়ে এগোতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছি:

১. ভর্তি এবং অফার লেটার সংগ্রহ করুন

প্রথমে আপনি যেই দেশে পড়তে চান, সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন গ্রহন হয়ে গেলে তারা আপনাকে একটা অফিশিয়াল অফার লেটার দেবে এটাই হলো ভিসা আবেদনের প্রথম শর্ত।

২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন

ভিসা আবেদনের জন্য নিচের কাগজগুলো আগে থেকেই গুছিয়ে রাখুন-

  • পাসপোর্ট
  • অফার লেটার
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • IELTS বা TOEFL স্কোর
  • মেডিকেল রিপোর্ট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স (যদি প্রয়োজন হয়)

৩. ভিসা ফর্ম পূরণ করে ফি জমা দিন

প্রতিটি দেশের আলাদা অনলাইন ভিসা আবেদনের সাইট আছে। সেখানে গিয়ে ফর্ম পূরণ করুম এবং নির্ধারিত ফি অনলাইনে জমা দিন।

৪. বায়োমেট্রিক ও ইন্টারভিউ (যদি প্রয়োজন হয়)

কিছু দেশে আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে, আবার কিছু দেশে শুধু বায়োমেট্রিক (আঙ্গুলের ছাপ) দিলেই হয়।

৫. অপেক্ষা করুন এবং রেজাল্ট নিন

সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার পর ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল জানানো হয়। ভিসা অনুমোদিত হলে পাসপোর্টে স্ট্যাম্প দেওয়া হয় অথবা ই-মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

২০২৫ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ধাপসমূহের বাংলা ইনফোগ্রাফিক।

জনপ্রিয় দেশগুলোতে কেমন ভিসা পেতে হয়?

যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চান, তাদের জন্য ইউকে, মাল্টা, ইতালি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। নিচে সংক্ষেপে জানিয়ে দিচ্ছি প্রতিটি দেশের স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:

যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যে পড়তে চাইলে Tier 4 Student Visa নিতে হয়। আবেদন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে CAS (Confirmation of Acceptance for Studies) লাগবে এবং ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে (যেমন IELTS স্কোর)।

  • ভিসা ফি: প্রায় £৩৬৩
  • কাজের সুযোগ: সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা (পাঠ্যক্রম চলাকালীন)

মাল্টা

মাল্টা এখন অনেক শিক্ষার্থীদের সেরা পছন্দের জায়গা, কারণ তুলনামূলকভাবে এই দেশে ভিসা পাওয়া অনেক সহজ।

  • ভিসা ফি: প্রায় €১০০
  • কাজের সুযোগ: সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত

ইতালি

ইতালিতে কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ থাকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি অনেকটাই কম।

  • ভিসা ফি: প্রায় €৫০–১০০
  • ব্যাংক সলভেন্স: থাকতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ

কানাডা

কানাডায় ভিসা নিতে হলে Study Permit লাগে। এখানে পড়াশোনা শেষ করার পর কাজের সুযোগও থাকে (Post-Graduation Work Permit)।

  • ভিসা ফি: CAD $১৫০
  • আর্থিক প্রমাণ: CAD $১০,০০০+
  • কাজের সুযোগ: সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে গেলে Subclass 500 Student Visa প্রয়োজন হয়। আবেদন করতে হলে COE (Confirmation of Enrolment) ও স্বাস্থ্য বিমা লাগবে।

  • ভিসা ফি: AUD $৭১০
  • কাজের সুযোগ: সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত

কোন ভুলগুলো থেকে বিরত থাকা উচিত?

স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করতে গিয়ে অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলেন, যার কারণে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে। নিচে এমন কিছু ভুল তুলে ধরা হলো যেগুলো এড়িয়ে চললে আপনার সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকবে:

ভুল বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া

ভিসা ফর্মে ভুল তথ্য বা অতিরঞ্জিত কিছু লিখবেননা যা খুব সহজেই ধরা পড়ে যায়, আর এতে ভিসা রিজেক্ট হয়ে যায়।

সঠিক ব্যাংক ব্যালেন্স না দেখানো

আপনার পড়াশোনা ও থাকার খরচ মেটানোর মতো যথেষ্ট টাকা ব্যাংকে না থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

IELTS বা ইংরেজি স্কোর কম হওয়া

অনেক দেশেই নির্দিষ্ট লেভেলের IELTS/TOEFL স্কোর দরকার হয়। স্কোর কম থাকলে অনেক সময় তারা ভিসা দিতে চায় না।

আবেদন ফর্ম দেরিতে জমা দেওয়া

শেষ মুহূর্তে আবেদন করলে সময়ের অভাবে ভুল হতে পারে, এবং অনেক সময় সময়মতো ভিসা মেলেও না।

সন্দেহজনক বা অবিশ্বস্ত এজেন্টের সঙ্গে কাজ করা

অবিশ্বস্ত ভিসা এজেন্ট অনেক সময় ভুয়া তথ্য দেয় বা ভুল গাইড করে, যেটা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

কবে থেকে আবেদন শুরু করা ভালো?

ভিসা আবেদন নিয়ে অনেকেই দোটানায় থাকেন—কখন শুরু করবো? খুব সহজ কথা হলো, আপনার ক্লাস শুরুর অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস আগে থেকেই ভিসার প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া সবচেয়ে ভালো।

এই সময়ের মধ্যে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলতে পারবেন, এবং অনায়াসে ভিসার আবেদন করতে পারবেন কোনো চাপ ছাড়াই। শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে আগেভাগে শুরু করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

সাধারণ ভিসা আর স্টুডেন্ট ভিসার মধ্যে পার্থক্য

বিষয় সাধারণ ভিসা স্টুডেন্ট ভিসা
উদ্দেশ্য পর্যটন, ব্যবসা, পারিবারিক ভ্রমণ পড়াশোনা ও শিক্ষাজনিত কার্যক্রম
মেয়াদ স্বল্পমেয়াদী (সাধারণত ৩০-৯০ দিন) দীর্ঘমেয়াদী (পড়াশোনার সময় পর্যন্ত)
কাজের সুযোগ সাধারণত অনুমতি নেই সীমিত সময় পার্ট-টাইম কাজের অনুমতি
আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ বিস্তারিত ও কঠোর
প্রয়োজনীয় নথি পাসপোর্ট, টিকেট, হোটেল বুকিং ভর্তি লেটার, আর্থিক প্রমাণ, শিক্ষা সংক্রান্ত নথি
ভিসার ধরণ ট্যুরিস্ট, বিজনেস, ফ্যামিলি ইত্যাদি স্টুডেন্ট ভিসা (Study Permit)


কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:

১. IELTS ছাড়া কি স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব?

হ্যাঁ, কিছু দেশে IELTS ছাড়াই ভিসা পাওয়া যায়, তবে সেটা সাধারণত সীমিত ও নির্দিষ্ট শর্তে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ দিতে হয়।

২. পার্ট-টাইম কাজ করার সুযোগ থাকে কি?

হ্যাঁ, অধিকাংশ দেশে স্টুডেন্ট ভিসায় সপ্তাহে ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পার্ট-টাইম কাজ করার অনুমতি থাকে, যা পড়াশোনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

৩. ব্যাংকে কত টাকা দেখাতে হয়?

সাধারণত ব্যাংকে ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা বা তার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা দেখানো লাগে, যা পড়াশোনা ও থাকার খরচ ঢেকে দেয়।


শেষ কথা:

স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে সঠিক তথ্য জানা এবং সময়মতো প্রস্তুতি নেওয়া একদম জরুরি। আশা করছি এই গাইডটি আপনার জন্য খুবই সহায়ক হবে এবং আপনার বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে।

আপনার যাত্রা সফল হোক, শুভকামনা রইলো!



আরও দখুন:

ভিসা কি? কিভাবে আবেদন করবেন ২০২৫ সালে

সৌদি আরবের ভিসা প্রসেস ২০২৫: বিস্তারিত গাইড ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য








Comments